বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আছছালামুআলাইকুম ।
নামায ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে প্রথম ।
নামায ছাড়া কোন মুসলমানই জান্নাতে যেতে পারবে না। কেয়ামতের দিন নামাযের কথাই প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে । আমরা সবাই জানি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স:) শবে মেরাজের দিন মহান
আল্লাহ পাকের কাছ থেকে আমাদের জন্য পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায উপহার নিয়ে এসেছেন । আসুন আমরা এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ইতিহাস সম্পর্কে জানি। ফজরের নামায ফরজ হওয়ার কারণ যখন আদম (আ:) দুনিয়ায় আগমন করেন তখন ছিল রাতের অন্ধকার । তিনি বেহেশতে কখনও রাত বা অন্ধকার দেখেননি।ফলে তিনি সারা রাত ভীত-স্বন্ত্রস্তভাবে সময় কাটান । পরে সোবহে সাদিক হলে তখন তাঁর ভয় দূর হয় । এ কারণে তিনি দুই রাকাত শোকরানা নামায আদায় করেন।আল্লাহ তায়ালা মহানবী (স:) এর মারফত সে নামাযকে আমাদের উপর ফরজ করে দিয়েছেন । যাতে বান্দা এ কথা স্মরণ করতে থাকে যে, যাবতীয় দু:খ-যন্ত্রণা বা ভয়-ভীতি একমাত্র আল্লাহই দূর করতে পারেন । হযরত আদম (আ:) রাতের অন্ধকার হতে মুক্তি লাভ করে শুকরিয়া আদায় করেছিলেন । আর আমরা নামাজ পড়ছি কবর এবং হাশরের অন্ধকার হতে নাজাত পাওয়ার জন্যে। প্রাত:কাল অলস দুনিয়াদের জন্য আরামের সময় । এ কারণে ফজরের নামাজ আদায় তাদের উপর ভীষণ মুশকিল হয়ে পড়ে ।
সুতরাং আল্লাহ তাঁর নেক বান্দাদেরকে সে সকল লোক হতে পৃথক করার জন্য ফজরের নামায ফরজ করে দিয়েছেন । ফজরের ওয়াক্ত ও আল্লাহর দীদারের সময়ের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে । এ জন্য বিশেষভাবে এ সময়ের নামায আল্লাহর দীদার লাভ করার প্রধান উপায় বলে পরিগণিত হয়েছে । কেননা মোনাজাত এবং আল্লাহর দরবার হাযির করার জন্য আমরা সময়ের সাথে নামাযের ওয়াক্ত লাভ করছি । তখন নিশ্চই আমরা আশা করতে পারি যে এর বদল আমরা আসল দীদারের এলাহী লাভ করতে পারব । এক হাদীসে বলা হয়েছে হে লোকসকল ! তোমরা কেয়ামতের দিন সামনা সামনি অবস্থায়
আল্লাহকে দেখবে । কিন্তু এর জন্য যদি তোমরা কোন অবাধ্য আমল করে থাক তা হচ্ছে ফজরের নামাজ । এ নামাজ কখনও পরিত্যাগ করো না । মহাবী (স:) বলেন : যে প্রভাতে উঠে নামায পড়তে যায় সে ঈমানের ঝান্ডা নিয়ে অগ্রসর হয় আর যে নামায বাদ দিয়ে পড়ে থাকে অথবা বাজারে যায় সে শয়তানের
ঝান্ডা নিয়ে অগ্রসর হয় (ইবনে মাজাহ) যোহরের ওয়াক্ত নিদিষ্ঠ হওয়ার কারণ যোহরের ওয়াক্ত নিদিষ্ঠকরণের মাঝে রহস্য হচ্ছে, এ সময় আসমানে ফেরেশতা তসবিহ পাঠ করেন । আসমানের সব দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং যাবতীয় দোয়া কবুল হয় ।
এ কারণে আল্লাহ তায়ালা এ সময়ে নামায ফরজ করে দিয়েছেন যাতে নামাযীগণ ফেরেশতাদের সঙ্গী হতে পারেন । তাদের দোয়া কবুল হয় এবং তাদের আমল শীঘ্র আসমানে পৌছে যায়।যে ব্যক্তি যোহরের নামায
পড়বে আল্লাহ তায়ালা তার দেহ আগুনের জন্য হারাম করে দেবেন এবং সে দোগে যাবে না। (মাজালেসে সানিয়া) আসরের ওয়াক্ত নিদিষ্ট হওয়ার কারণ
হযরত আদম (আ:)আল্লাহ তায়ালার নিষিদ্ধ ফল
ভক্ষণ করেন । ফলে তিনি বস্ত্রহীন হয়ে পড়েন এবং আল্লাহর আদেশ অমান্য করার দরুন বেহেশত হতে বহিষ্কৃত এবং দুনিয়ায় নিক্ষিপ্ত হন । এ সকল ঘটনা আসরের সময়েই ঘটেছিল । তাই এ সময়ে উম্মতে মুহাম্মদীকে পানাহারতে বিরত থেকে নামাযে মশগুল থেকে কিছুক্ষণ রোজাদারের মত কাটাতে আদেশ করা হয়েছে । যাতে তারা আল্লাহর সন্তুষ্ঠি এবং রহমত লাভ করার যৌগ্য হতে পার। হযরত ইউনুস (আ:)কে আল্লাহ তায়ারা চারটি অন্ধকার জায়গায়
কায়েদ করে রেখেছিলেন :
( ১) দরিয়ার অন্ধকার।
(২)মাছের পেটের মধ্যকার অন্ধকার
(৩)হযরত ইউনূস (আ:) কে ভক্ষণকারী মৎসটিকে
অন্য একটি মৎস ভক্ষণ করেছিল ।
এ মৎস দুটির পেটের অন্ধকার
(৪) রাত্রের অন্ধকার ।
হযরত ইউনুস (আ:) আল্লাহ তায়ালার দেয়া
এ চারটি অন্ধকারের মধ্যে আবদ্ধ
থেকে ভীত সন্ত্রস্তভাবে নিন্মের দোয়াটি পড়েছিলেন:
লা ইলাহা ইল্লা আনতা সোবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায যোয়ালেমিন ।
ফলে আল্লাহ তায়ালার আদেশে মৎস হযরত ইউনূস (আ:)
কে যমীনে পরিত্যাগ করে আসল।
কোরআন পাকে আছে : যদি তিনি হযরত ইউনুস (আ:)
মাছের পেটে থেকে তসবিহ না পড়তেন তাহলে
তিনি কেয়ামত পর্যন্ত মাছের পেটে তেকে যেতেন ।
যখন ইউনুস (আ:) মাছের পেট থেকে বের হলেন তখন
ছিল আসরের ওয়াক্ত।
হযরত ইউনুস (আ:) মুক্তি লাভ করে
আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার জন্য চার রাকাত নামায পড়েন ।
তাই আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মুহাম্মদীর উপর এই চার রাকাত নামায
ফরজ করে দিয়েছেন যাতে তারা ইউনুস (আ:)
এর মহাবিপেদের কথা স্মরণ করে
এবং নামাযের বরকতে হযরত ইউনূস
(আ:) এর ন্যায় যাবতীয় অন্ধকার
এবং মুসিবত হতে বেঁচে থাকতে পারে।
মাগরিবের নামায নিধারণ করার কারণ
মাগরীবের সময়ে হযরত আদম (আ:)
এর সেজদা ও দোয় কবুল হয়েছিল ।
তাই এ সময় শোকরানা নামায পড়েছিলেন ।
আর যেহেতু আদম (আ:) এর দোয়া কবুল
হওয়া তাঁর আওলাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার
অপরীসীম অনুগ্রহ তাই কৃতজ্ঞতা প্রশাশের
জন্য তাঁর আওলাদের উপর এ সময়ের
নামায ফরজ করে দেওয়া হয়েছে।
হযরত ইয়াকূব (আ:) এর পুত্র হযরত ইউসূফ
(আ:)বিচ্ছেদে ৪০ বছর পযর্ন্ত শোকাকুল অবস্থায় কাটান ।
অত:পর আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রতি সদয় হন ।
হযরত ইউসূফ (আ:)এর দূত তাঁর জামা নিয়ে
হযরত ইয়াকূব (আ:) এর দরবার উপস্থিত হলেন ।
এ জামা তার চহারায় লাগানো মাত্র
তাঁর যাবতীয় দু:খ দূরিভূত হয় ।
হযরত ইয়াকূব (আ:) তখন আল্লাহর দরবারে
শুকরিয়া আদায়ের জন্য তিন রাকাত নামায পড়েন ।
এ ক্ষেত্রে হযরত ইয়াকূব (আ:)
কে অনুসরণ করার জন্যই
আমাদের উপর এ নামায ফরজ করে দিয়েছেন।
মাগরীবের সময় সূর্যাস্তের সাথে সাথে দিনের আলো
প্রসারিত হয় এবং রাতের আধাঁর সমগ্র জগতকে গ্রাস করতে থাকে । তখন রাতের আধারে নানা রকম ক্ষতিকারক জন্ত্রু , ভূত –প্রেত প্রভৃতি নিজ নিজ অবসথান থেকে বের হয়ে এখান থেকে সেখানে ঘুরা ফেরা করতে থাকে।মহানবী (স:) এ সময় ছোট ছোট ছেলে মেয়েদেরকে ঘরের বাহিরে যেতে নিষেধ করেছেন ।
এক কথায় রাত আসার সাথে সাথেই
অনেক রকমের বালা মসীবত আসতে শুরু করে ।
তাই আল্লাহ তায়ারা এ সময় মাগরীবের নামায
ফরজ করে দিয়েছেন যাত তার বান্দারা এর বরকতে
যাবতীয় বিপদ আপদ হতে নিরাপদ থাকতে পারে।
এশার নামায ফরজ করার কারণ নীল দরিয়া পাড় হওয়ার দিন হযরত মূসা
(আ:) চার প্রকার চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েছিলেন।
(১)নিজে নীল দরিয়া পাড় হওয়ার চিন্তা ।
(২) নিজের সঙ্গীদের নীল দরিয়া পাড় হওয়ার চিন্তা
(৩)ফেরাউনদের কবল হতে রক্ষা পাওয়ার চিন্তা
(৪)ফেরাউন ও তার লোকদের ধ্বংসের চিন্তা ।
আল্লাহ তায়ালা এশার সময় ফেরাউন ও তার লোকদের নীল নদে ডুবিয়ে মারেন ।কোরআন পকে আছে“ এবং আমি ফেরাউনদের লোকদেরকে ডুবিয়েছি আর তোমরা তা দেখেছিলে ।”
উপরে লিখিত চার প্রকার চিন্তা হতে মুক্তি পেয়ে মূসা (আ:) এশার সময় চার রাকাত শোকরানা নামায
পড়েছিলেন।আল্লাহ তায়ালা ঐ চার রাকাত নামায উম্মতে মুহাম্মদীর নিকট ফরজ করেন ।
যাতে হক ও বাতিলের মোকাবিলায় হকের চিরন্তন বিজয়ের জন্য তারা কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে থাকে । কেননা যাবতীয় সফলতা একমাত্র আল্লাহর
তরফ হইতে আসে । কোন মানুষ নীজ শক্তিতে তা হাসিল করতে পারে না।
নবী করীম (স:) এই এশার সময়েই মেরাজে গমনের সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন ।কিন্তু এই বিশেষ মেরাজ তো নবীর জন্যই নির্ধারীত ছিল । তাই এর স্মৃতি রক্ষার জন্য এশার নামাযকেই আল্লাহ তায়ালা
তাঁর বান্দাদের জন্য ফরজ করে দিয়েছেন । হাদীস শরীফে এসেছে “নামায মুমিনদের জন্য মেরাজ”।
এশা ছাড়া অন্য নামাযের সময় অন্যান্য ধর্মের লোকেরাও তাদের মাবুদের উপাসনা
করে থাকে।কিন্তু এশা এমন একটি সময় যখন মুসলমানরাই আল্লাহর এবাদতে
মশগুল থাকে।জ্বীনও মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে “এবং আমি জ্বীন ও মানবজাতীকে একমাত্র আমার এবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি ।” মহানবী (স:) বলেছেন : মুনাফেকদের নিকট এশা ও ফজরের নামাযের চেয়ে কঠিন কোন নামায নেই। যদি তারা জানত যে, এর জন্য কত অসীম সওয়াব রয়েছে তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এই নামাযে শরীক হতো (মুসলীম)। সুতরাং পরিশেষে বলা যায় যে নামায হলো ইসলামের মূল চাবিকাঠি ।
এটি ছাড়া কোন মুসলমান ব্যক্তিই জান্নাতে জাইতে পারবে না ।আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিকভাবে
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার তওফিক দান করুন।
আমিন।
সুত্র: আমলে নাযাত।
আছছালামুআলাইকুম ।
নামায ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে প্রথম ।
নামায ছাড়া কোন মুসলমানই জান্নাতে যেতে পারবে না। কেয়ামতের দিন নামাযের কথাই প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে । আমরা সবাই জানি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স:) শবে মেরাজের দিন মহান
আল্লাহ পাকের কাছ থেকে আমাদের জন্য পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায উপহার নিয়ে এসেছেন । আসুন আমরা এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ইতিহাস সম্পর্কে জানি। ফজরের নামায ফরজ হওয়ার কারণ যখন আদম (আ:) দুনিয়ায় আগমন করেন তখন ছিল রাতের অন্ধকার । তিনি বেহেশতে কখনও রাত বা অন্ধকার দেখেননি।ফলে তিনি সারা রাত ভীত-স্বন্ত্রস্তভাবে সময় কাটান । পরে সোবহে সাদিক হলে তখন তাঁর ভয় দূর হয় । এ কারণে তিনি দুই রাকাত শোকরানা নামায আদায় করেন।আল্লাহ তায়ালা মহানবী (স:) এর মারফত সে নামাযকে আমাদের উপর ফরজ করে দিয়েছেন । যাতে বান্দা এ কথা স্মরণ করতে থাকে যে, যাবতীয় দু:খ-যন্ত্রণা বা ভয়-ভীতি একমাত্র আল্লাহই দূর করতে পারেন । হযরত আদম (আ:) রাতের অন্ধকার হতে মুক্তি লাভ করে শুকরিয়া আদায় করেছিলেন । আর আমরা নামাজ পড়ছি কবর এবং হাশরের অন্ধকার হতে নাজাত পাওয়ার জন্যে। প্রাত:কাল অলস দুনিয়াদের জন্য আরামের সময় । এ কারণে ফজরের নামাজ আদায় তাদের উপর ভীষণ মুশকিল হয়ে পড়ে ।
সুতরাং আল্লাহ তাঁর নেক বান্দাদেরকে সে সকল লোক হতে পৃথক করার জন্য ফজরের নামায ফরজ করে দিয়েছেন । ফজরের ওয়াক্ত ও আল্লাহর দীদারের সময়ের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে । এ জন্য বিশেষভাবে এ সময়ের নামায আল্লাহর দীদার লাভ করার প্রধান উপায় বলে পরিগণিত হয়েছে । কেননা মোনাজাত এবং আল্লাহর দরবার হাযির করার জন্য আমরা সময়ের সাথে নামাযের ওয়াক্ত লাভ করছি । তখন নিশ্চই আমরা আশা করতে পারি যে এর বদল আমরা আসল দীদারের এলাহী লাভ করতে পারব । এক হাদীসে বলা হয়েছে হে লোকসকল ! তোমরা কেয়ামতের দিন সামনা সামনি অবস্থায়
আল্লাহকে দেখবে । কিন্তু এর জন্য যদি তোমরা কোন অবাধ্য আমল করে থাক তা হচ্ছে ফজরের নামাজ । এ নামাজ কখনও পরিত্যাগ করো না । মহাবী (স:) বলেন : যে প্রভাতে উঠে নামায পড়তে যায় সে ঈমানের ঝান্ডা নিয়ে অগ্রসর হয় আর যে নামায বাদ দিয়ে পড়ে থাকে অথবা বাজারে যায় সে শয়তানের
ঝান্ডা নিয়ে অগ্রসর হয় (ইবনে মাজাহ) যোহরের ওয়াক্ত নিদিষ্ঠ হওয়ার কারণ যোহরের ওয়াক্ত নিদিষ্ঠকরণের মাঝে রহস্য হচ্ছে, এ সময় আসমানে ফেরেশতা তসবিহ পাঠ করেন । আসমানের সব দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং যাবতীয় দোয়া কবুল হয় ।
এ কারণে আল্লাহ তায়ালা এ সময়ে নামায ফরজ করে দিয়েছেন যাতে নামাযীগণ ফেরেশতাদের সঙ্গী হতে পারেন । তাদের দোয়া কবুল হয় এবং তাদের আমল শীঘ্র আসমানে পৌছে যায়।যে ব্যক্তি যোহরের নামায
পড়বে আল্লাহ তায়ালা তার দেহ আগুনের জন্য হারাম করে দেবেন এবং সে দোগে যাবে না। (মাজালেসে সানিয়া) আসরের ওয়াক্ত নিদিষ্ট হওয়ার কারণ
হযরত আদম (আ:)আল্লাহ তায়ালার নিষিদ্ধ ফল
ভক্ষণ করেন । ফলে তিনি বস্ত্রহীন হয়ে পড়েন এবং আল্লাহর আদেশ অমান্য করার দরুন বেহেশত হতে বহিষ্কৃত এবং দুনিয়ায় নিক্ষিপ্ত হন । এ সকল ঘটনা আসরের সময়েই ঘটেছিল । তাই এ সময়ে উম্মতে মুহাম্মদীকে পানাহারতে বিরত থেকে নামাযে মশগুল থেকে কিছুক্ষণ রোজাদারের মত কাটাতে আদেশ করা হয়েছে । যাতে তারা আল্লাহর সন্তুষ্ঠি এবং রহমত লাভ করার যৌগ্য হতে পার। হযরত ইউনুস (আ:)কে আল্লাহ তায়ারা চারটি অন্ধকার জায়গায়
কায়েদ করে রেখেছিলেন :
( ১) দরিয়ার অন্ধকার।
(২)মাছের পেটের মধ্যকার অন্ধকার
(৩)হযরত ইউনূস (আ:) কে ভক্ষণকারী মৎসটিকে
অন্য একটি মৎস ভক্ষণ করেছিল ।
এ মৎস দুটির পেটের অন্ধকার
(৪) রাত্রের অন্ধকার ।
হযরত ইউনুস (আ:) আল্লাহ তায়ালার দেয়া
এ চারটি অন্ধকারের মধ্যে আবদ্ধ
থেকে ভীত সন্ত্রস্তভাবে নিন্মের দোয়াটি পড়েছিলেন:
লা ইলাহা ইল্লা আনতা সোবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায যোয়ালেমিন ।
ফলে আল্লাহ তায়ালার আদেশে মৎস হযরত ইউনূস (আ:)
কে যমীনে পরিত্যাগ করে আসল।
কোরআন পাকে আছে : যদি তিনি হযরত ইউনুস (আ:)
মাছের পেটে থেকে তসবিহ না পড়তেন তাহলে
তিনি কেয়ামত পর্যন্ত মাছের পেটে তেকে যেতেন ।
যখন ইউনুস (আ:) মাছের পেট থেকে বের হলেন তখন
ছিল আসরের ওয়াক্ত।
হযরত ইউনুস (আ:) মুক্তি লাভ করে
আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার জন্য চার রাকাত নামায পড়েন ।
তাই আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মুহাম্মদীর উপর এই চার রাকাত নামায
ফরজ করে দিয়েছেন যাতে তারা ইউনুস (আ:)
এর মহাবিপেদের কথা স্মরণ করে
এবং নামাযের বরকতে হযরত ইউনূস
(আ:) এর ন্যায় যাবতীয় অন্ধকার
এবং মুসিবত হতে বেঁচে থাকতে পারে।
মাগরিবের নামায নিধারণ করার কারণ
মাগরীবের সময়ে হযরত আদম (আ:)
এর সেজদা ও দোয় কবুল হয়েছিল ।
তাই এ সময় শোকরানা নামায পড়েছিলেন ।
আর যেহেতু আদম (আ:) এর দোয়া কবুল
হওয়া তাঁর আওলাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার
অপরীসীম অনুগ্রহ তাই কৃতজ্ঞতা প্রশাশের
জন্য তাঁর আওলাদের উপর এ সময়ের
নামায ফরজ করে দেওয়া হয়েছে।
হযরত ইয়াকূব (আ:) এর পুত্র হযরত ইউসূফ
(আ:)বিচ্ছেদে ৪০ বছর পযর্ন্ত শোকাকুল অবস্থায় কাটান ।
অত:পর আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রতি সদয় হন ।
হযরত ইউসূফ (আ:)এর দূত তাঁর জামা নিয়ে
হযরত ইয়াকূব (আ:) এর দরবার উপস্থিত হলেন ।
এ জামা তার চহারায় লাগানো মাত্র
তাঁর যাবতীয় দু:খ দূরিভূত হয় ।
হযরত ইয়াকূব (আ:) তখন আল্লাহর দরবারে
শুকরিয়া আদায়ের জন্য তিন রাকাত নামায পড়েন ।
এ ক্ষেত্রে হযরত ইয়াকূব (আ:)
কে অনুসরণ করার জন্যই
আমাদের উপর এ নামায ফরজ করে দিয়েছেন।
মাগরীবের সময় সূর্যাস্তের সাথে সাথে দিনের আলো
প্রসারিত হয় এবং রাতের আধাঁর সমগ্র জগতকে গ্রাস করতে থাকে । তখন রাতের আধারে নানা রকম ক্ষতিকারক জন্ত্রু , ভূত –প্রেত প্রভৃতি নিজ নিজ অবসথান থেকে বের হয়ে এখান থেকে সেখানে ঘুরা ফেরা করতে থাকে।মহানবী (স:) এ সময় ছোট ছোট ছেলে মেয়েদেরকে ঘরের বাহিরে যেতে নিষেধ করেছেন ।
এক কথায় রাত আসার সাথে সাথেই
অনেক রকমের বালা মসীবত আসতে শুরু করে ।
তাই আল্লাহ তায়ারা এ সময় মাগরীবের নামায
ফরজ করে দিয়েছেন যাত তার বান্দারা এর বরকতে
যাবতীয় বিপদ আপদ হতে নিরাপদ থাকতে পারে।
এশার নামায ফরজ করার কারণ নীল দরিয়া পাড় হওয়ার দিন হযরত মূসা
(আ:) চার প্রকার চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েছিলেন।
(১)নিজে নীল দরিয়া পাড় হওয়ার চিন্তা ।
(২) নিজের সঙ্গীদের নীল দরিয়া পাড় হওয়ার চিন্তা
(৩)ফেরাউনদের কবল হতে রক্ষা পাওয়ার চিন্তা
(৪)ফেরাউন ও তার লোকদের ধ্বংসের চিন্তা ।
আল্লাহ তায়ালা এশার সময় ফেরাউন ও তার লোকদের নীল নদে ডুবিয়ে মারেন ।কোরআন পকে আছে“ এবং আমি ফেরাউনদের লোকদেরকে ডুবিয়েছি আর তোমরা তা দেখেছিলে ।”
উপরে লিখিত চার প্রকার চিন্তা হতে মুক্তি পেয়ে মূসা (আ:) এশার সময় চার রাকাত শোকরানা নামায
পড়েছিলেন।আল্লাহ তায়ালা ঐ চার রাকাত নামায উম্মতে মুহাম্মদীর নিকট ফরজ করেন ।
যাতে হক ও বাতিলের মোকাবিলায় হকের চিরন্তন বিজয়ের জন্য তারা কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে থাকে । কেননা যাবতীয় সফলতা একমাত্র আল্লাহর
তরফ হইতে আসে । কোন মানুষ নীজ শক্তিতে তা হাসিল করতে পারে না।
নবী করীম (স:) এই এশার সময়েই মেরাজে গমনের সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন ।কিন্তু এই বিশেষ মেরাজ তো নবীর জন্যই নির্ধারীত ছিল । তাই এর স্মৃতি রক্ষার জন্য এশার নামাযকেই আল্লাহ তায়ালা
তাঁর বান্দাদের জন্য ফরজ করে দিয়েছেন । হাদীস শরীফে এসেছে “নামায মুমিনদের জন্য মেরাজ”।
এশা ছাড়া অন্য নামাযের সময় অন্যান্য ধর্মের লোকেরাও তাদের মাবুদের উপাসনা
করে থাকে।কিন্তু এশা এমন একটি সময় যখন মুসলমানরাই আল্লাহর এবাদতে
মশগুল থাকে।জ্বীনও মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে “এবং আমি জ্বীন ও মানবজাতীকে একমাত্র আমার এবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি ।” মহানবী (স:) বলেছেন : মুনাফেকদের নিকট এশা ও ফজরের নামাযের চেয়ে কঠিন কোন নামায নেই। যদি তারা জানত যে, এর জন্য কত অসীম সওয়াব রয়েছে তাহলে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এই নামাযে শরীক হতো (মুসলীম)। সুতরাং পরিশেষে বলা যায় যে নামায হলো ইসলামের মূল চাবিকাঠি ।
এটি ছাড়া কোন মুসলমান ব্যক্তিই জান্নাতে জাইতে পারবে না ।আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিকভাবে
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার তওফিক দান করুন।
আমিন।
সুত্র: আমলে নাযাত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন