সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ট নবী হযরত মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। দুনিয়াতে যারা তাঁর
দেখানো পথে চলবে, পরকালে তারাই
জান্নাতে যাবে। তারাই জাহান্নাম থেকে মুক্তি
পাবে। আমরা তাঁর উম্মত বা অনুসারী দল। আমরা
তাঁর দেখানো পথে চলি। সঠিক পথ পাবার
জন্যে তিনি আমাদের কাছে দুটি জিনিস রেখে
গেছেন। একটি হলো আল্লাহর কুরআন। আর
অপরটি হলো তাঁর সুন্নত বা সুন্নাহ।
নবীর সুন্নাহ সম্পর্কে জানা যায় হাদীস
থেকে। হাদীসের অনেকগুলো বড় বড়
গ্রন্থ আছে । নবীর বাণীকে হাদীস
বলে।
নবীর কাজ কর্ম এবং চরিত্রের বর্ণনাকে ও
হাদীস বলে। নবীর সমর্থন এবং আদেশ
নিষেধের বর্ণনাকেও হাদীস বলে।
ইসলামের সত্য ও সঠিক পথকে জানাবার জন্যে
আমাদেরকে আল্লাহর বাণী কুরআন
মজীদকে বুঝতে হবে এবং মানতে হবে।
ঠিক তেমনি আমাদেরকে মহানবী হযরত
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী
হাদীস পড়তে হবে এবং সে অনুযায়ী
চলতে হবে। তবেই মহান আল্লাহ খুশী
হবেন আমাদের প্রতি। আমরা হতে পারবো
সত্যিকার মুসলিম।
সে জন্যেই আমরা এখানে সংকলন করেছি
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
অনেকগুলো হাদীস। এসো আমরা সবাই প্রিয়
নবীর এই বাণীগুলো পড়ি এবং মেনে চলি।
আল্লাহ
১.জান্নাতের চাবি হলো – ‘ আল্লাহ ছাড়া
কোনো ইলাহ নাই ’ এ সাক্ষ্য দেয়া । ( আহমদ )
শব্দার্থ : ‘ ইলাহ’ মানে হুকুমকর্তা , আইনদাতা ,
আশ্রয়দাতা, ত্রাণকর্তা, উপাস্য, প্রার্থনা
শ্রবণকারী।
২.আল্লাহ সুন্দর ! তিনি সৌন্দর্যকেই পছন্দ
করেন। [ সহীহ মুসলিম ]
৩. শ্রেষ্ঠ কথা চারটি :
ক. সুবহানাল্লাহ – আল্লাহ পবিত্র ,
খ. আল হামদুলিল্লাহ – সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর ,
গ. লা – ইলাহা ইল্লাল্লাহ – আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ
নাই,
ঘ. আল্লাহু আকবর – আল্লাহ মহান। [ সহীহ
মুসলিম ]
আল্লাহর অধিকার
৪. বান্দাহর উপর আল্লাহর অধিকার হলো , তারা
কেবল তাঁরই আনুগত্য ও দাসত্ব করবে এবং তাঁর
সাথে কোনো অংশীদার বানাবেনা ।
[ সহীহ বুখারী ]
ঈমান
৫.বলো : ‘ আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি ;
অতপর এ কথার উপর অটল থাকো । [ সহীহ
মুসলিম ] ৬. ঈমান না এনে তোমরা জান্নাতে
প্রবেশ করতে পারবেনা। [ তারগীব ] ৭.
যে কেউ এই ঘোষণা দেবে : ‘ আল্লাহ ছাড়া
কোনো ইলাহ নাই আর মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহর
রসূল ’ – আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্যে
নিষিদ্ধ করে দেবেন।[ সহীহ বুখারী ]
ঈমান থাকার লক্ষণ
৮. তুমি মুমিন হবে তখন , যখন তোমার ভালো
কাজ তোমাকে আনন্দ দেবে , আর মন্দ
কাজ দেবে মনোকষ্ট। [ আহমদ ]
ইসলাম
৯. সব কাজের আসল কাজ হলো ‘ ইসলাম’ ।
[ আহমদ ] ১০. কোনো বান্দাহ ততোক্ষণ
পর্যন্ত মুসলিম হয়না , যতোক্ষণ তার মন ও যবান
মুসলিম না হয়। [ তাগরীব ]
পবিত্রতা
১১. পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। [ সহীহ
মুসলিম ] ১২ . যে পূত পবিত্র থাকতে চায় ,
আল্লাহ তাকে পূত পবিত্র রাখেন। [ সহীহ
বুখারী ]
সালাত
১৩. সালাত জান্নাতের চাবি। [ আহমদ ] শব্দার্থ :
সালাত – নামায । জান্নাত – বেহেশত।
১৪ . সালাত হলো ‘ নূর’ । [ সহীহ মুসলিম ] ১৫.
সালাত আমার চক্ষু শীতলকারী । [ নাসায়ী ]
১৬. পবিত্রতা সালাতের চাবি । [ আহমদ ] ১৭. সালাত
মুমিনদের মি’রাজ । [ মিশকাত ]
শব্দার্থ : মি’রাজ মানে – উর্ধ্বে গমন করা বা
আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা।
১৮. যে পরিশুদ্ধ হয়না , তার সালাত হয়না। [ মিশকাত ]
১৯. সাত বছর বয়স হলেই তোমাদের
সন্তানদের সালাত আদায় কতে আদেশ করো
। [ আবু দাউদ ] ২০. কিয়ামতের দিন পয়লা হিসাব
নেয়া হবে সালাতের । [ তাবরানি ] ২১ . আল্লাহর
অনুগত দাস আর কুফরীর মাঝে মিলন সেতু
হলো সালাত ত্যাগ করা । [ সহীহ মুসলিম ] ২২ .
যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্যে সালাত
পড়লো , সে শিরক করলো । [ আহমদ ]
সাওম
২৩ . সাওম একটি ঢাল। [ মিশকাত ]
শব্দার্থ : সাওম – রোজা।
২৪. সাওম এবং কুরআন বান্দার জন্যে সুপারিশ
করবে । [ বায়হাকী ] ২৫. যখন রমযান শুরু হয় ,
তখন রহমতের দুয়ার খুলে দেয়া হয়।
[ সহীহ বুখারী ] ২৬. তোমাদের মাঝে
বরকতময় রমযান মাস এসেছে। আল্লাহ
তোমাদের উপর এ মাসের সিয়াম সাধনা ফরয
করে দিয়েছেন। [ নাসায়ী ]
হজ্জ ও উমরা
২৭. হজ্জ ও উমরা পালনকারীরা আল্লার
মেহমান। [ মিশকাত ]
আল্লাহর পথে জিহাদ
২৮ . আল্লাহর পথে একটি সকাল কিংবা একটি সন্ধ্যা
ব্যয় করা গোটা পৃথিবী এবং পৃথিবীর সমস্ত
সম্পদের চেয়ে উত্তম। [ সহীহ বুখারী ]
২৯. যে লড়ে যায় আল্লাহর বাণীকে
বিজয়ী করার জন্যে সেই আল্লাহর পথে
( জিহাদ করে ) । [ সহীহ বুখারী ] ৩০.
অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য কথা বলা
সবচেয়ে বড় জিহাদ। [ তিরমিযী ]
জ্ঞানার্জন
৩১. রাত্রে ঘন্টাখানেক জ্ঞান চর্চা করা সারা রাত
জেগে ( ইবাদতে নিরত ) থাকার চেয়ে
উত্তম । [ দারমী ] ৩২. যে জ্ঞানের
সন্ধানে বের হয় , সে আল্লাহর পথে বের
হয়। [ তিরমিযী ] ৩৩. আমার পরে সবচেয়ে
বড় দানশীল সে , যে কোনো বিষয়ে
জ্ঞান লাভ করলো , অতপর তা ছড়িয়ে দিলো ।
[ বায়হাকী ]
আল কুরআন
৩৪. সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব ।
[ সহীহ মুসলিম ] ৩৫. কুরআনকে আঁকড়ে
ধরো , তাহলে কখনো বিপথগামী হবেনা।
[ মিশকাত ] ৩৬. কুরআন পরিবারের লোকেরা
আল্লাহর পরিবার এবং তাঁর বিশেষ লোক।
[ নাসায়ী ] ৩৭. তোমরা আল্লাহর কিতাবকে
আঁকড়ে ধরো। এর হালালকে হালাল বলে
গ্রহণ করো এবং এর হারামকে হারাম বলে
বর্জন করো । [ হাকিম ] ৩৮. যে আল্লাহর
কিতাবের পথ ধরে সে দুনিয়াতে বিপথগামী
হয়না এবং পরকালে হয়না দুর্ভাগা । [ মিশকাত ] ৩৯.
আমার উম্মতের সম্মানিত লোক হলো
কুরআনের বাহক আর রাতের সাথীরা
[ বায়হাকী ]
রসূল ও সুন্নাহ
৪০. সর্বোত্তম জীবন পদ্ধতি হচ্ছে
মুহাম্মদ সাঃ প্রদর্শিত পদ্ধতি। [ সহীহ মুসলিম ]
৪১. যে আমার আনুগত্য করলো সে আল্লাহর
আনুগত্য করলো। [ সহীহ বুখারী ] ৪২. যে
আমাকে অমান্য করলো সে আল্লাহকে
অমান্য করলো । [ সহীহ বুখারী ] ৪৩. যে
আমার সুন্নতকে ভালোবাসলো সে আমাকে
ভালোবাসলো । [ সহীহ মুসলিম ] ৪৪. যে
আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হলো , সে আমার
লোক নয়। [ সহীহ মুসলিম ] ৪৫ . আমি
আল্লাহর কাছে শেষ নবী হিসেবে লিখিত
আছি। [ শরহে সুন্নাহ ]
নিয়্যত
৪৬. কাজ নির্ভর করে নিয়্যতের উপর।
[ সহীহ বুখারী ] নোট : নিয়্যত মানে -
উদ্দেশ্য,সংকল্প,ইচ্ছা ,কোনো নির্দিষ্ট কাজ
করার সিদ্ধান্ত নেয়া।‘কাজ নির্ভর করে
নিয়্যতের উপর ’ মানে কাজের পেছনে
মানুষের যে উদ্দেশ্য, সংকল্প বা সিদ্ধান্ত
থাকে, তার ভিত্তিতেই সে ফল ও পুরস্কার লাভ
করবে।
৪৭. প্রত্যেক ব্যক্তি তার কাজের সেই ফলই
পাবে,যা সে নিয়্যত করেছে।[সহীহ
বুখারী ] ৪৮.আল্লাহ তোমাদের চেহারা সুরত
ও ধনসম্পদ দেখবেননা,তিনি দেখবেন
তোমাদের অন্তর ও কাজ [সহীহ মুসলিম ]
নোট :এখানে অন্তর মানে -উদ্দেশ্য ও
লক্ষ্য বা নিয়্যত।
এই তিনটি হাদীস থেকে আমরা মানব
জীবনে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বা নিয়্যতের
গুরুত্ব জানতে পারলাম।সুতরাং আল্লাহর সন্তুষ্টি
লাভের উদ্দেশ্যেই যাবতীয় কাজ করা উচিত।
নৈতিক চরিত্র
৪৯.মহত চরিত্রের পূর্ণতা দানের জন্যে আমার
আগমন। [মুআত্তায়ে মালিক ] শব্দার্থ
:‘আখলাকুন’ও‘খুলুকুন’ মানে -নৈতিক
চরিত্র,ব্যবহার,আচার আচরণ।
৫০.উত্তম চরিত্রের চাইতে বড় মর্যাদা আর
নেই।[ইবনে হিব্বান ] ৫১.ঈমানের পূর্ণতা
লাভকারী মুমিন তারা,যাদের নৈতিক চরিত্র
সর্বোত্তম।[মিশকাত ] ৫২.তোমাদের
মধ্যে সবচেয়ে ভালো মানুষ তারা,যাদের
আচার ব্যবহার সবচেয়ে ভালো।[সহীহ
বুখারী ] ৫৩.আল্লাহর নবীর চরিত্র ছিলো ঠিক
কুরআনের মতো।[আয়েশা রাঃ সহীহ মুসলিম ]
দীন
৫৪.দীন খুব সহজ [সহীহ বুখারী ] ব্যাখ্যা
:দীন মানে – জীবন যাপন পদ্ধতি।
এখানো দীন মানে দীন ইসলাম । অর্থাৎ
ইসলামের জীবন যাপন পদ্ধতি খুব সহজ।
৫৫ . দীন হলো – কল্যাণ কামনা । [ সহীহ
মুসলিম ] নোট : দীন ইসলামের মূল কথা
হলো , নিজের এবং সকল মানুষের দুনিয়াবী ও
পরকালীন কল্যাণ চাওয়া ।
৫৬ . আল্লাহ যার ভালো চান, তাকে দীনের
সঠিক জ্ঞান দান করেন। [ সহীহ বুখারী ]
আল্লাহর ভয়
৫৭. জ্ঞানের মাথা হলো আল্লাহকে ভয় করা।
[ মিশকাত ] ব্যাখ্যা : অর্থাৎ যে আল্লাহকে ভয়
করে সে – ই সবচেয়ে বড় জ্ঞানী ।
৫৮. আল্লাহকে ভয় করো , তাতেই
সবচেয়ে বড় ইবাদতকারী হতে পারবে।
[ মিশকাত ] ৫৯. একজনের উপর আরেকজনের
কোনো মর্যাদা নেই। তবে আছে আল্লাহ
ভীতি ভিত্তির । [ তিবরানী ] ৬০. সে ব্যক্তি
দোযখে প্রবেশ করবেনা , যে আল্লাহর
ভয়ে কাঁদে। [ তিরমিযী ]
শ্রেষ্ঠ আমল
৬১. শ্রেষ্ঠ আমল হলো , আল্লাহর জন্যে
ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্যে ঘৃণা করা । [ আবু
দাউদ ]
বিশ্বস্ততা
৬২. যার মধ্যে আমানত নেই তার ঈমান নেই ।
[ মিশকাত ] শব্দার্থ : আমানত মানে – বিশ্বস্ততা ,
বিশ্বাসযোগ্যতা।
৬৩. যে অংগীকার রক্ষা করেনা , তার ধর্ম
নেই। [ মিশকাত ]
দুনিয়ার জীবন
৬৪. দুনিয়া মুমিনের জন্যে কারাগার আর কাফিরের
বেহেশত। [ সহীহ মুসলিম ] ৬৫. দুনিয়াতে
এমন ভাবে জীবন যাপন করো যেনো তুমি
একজন গরীব কিংবা পথিক। [ সহীহ বুখারী ]
৬৬. অনাড়ম্বর জীবন যাপন ঈমানের অংশ । [ আবু
দাউদ ]
মসজিদ
৬৭. পৃথিবীতে মসজিদগুলোই আল্লাহর
সবচাইতে প্রিয় জায়গা। [ সহীহ মুসলিম ] ৬৮.
আমার জন্যে গোটা পৃথিবীকেই সিজদার
জায়গা এবং পবিত্র করে দেয়া হয়েছে।
[ সহীহ বুখারী ] ৬৯. যে আল্লাহর
উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ বানায় , আল্লাহ
জান্নাতে তার জন্যে একটি ঘর বানায়। [ সহীহ
বুখারী ]
মুয়াজ্জিন
৭০. কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনের ঘাড় সবচেয়ে
লম্বা উঁচু হবে। [ সহীহ মুসলিম ]
নিজের জন্যে পরের জন্যে
৭১. নিজের জন্যে যা পছন্দ করো ,
অন্যদের জন্যেও তাই পছন্দ করবে ,
তবেই হতে পারবে মুমিন। [ সহীহ মুসলিম ]
৭২. তোমাদের কেউ মুমিন হবেনা ,
যতোক্ষণ সে নিজের জন্যে যা পছন্দ
করে , তার ভাইয়ের জন্যেও তাই পছন্দ না
করবে । [ সহীহ বুখারী ]
আল্লাহই যথেষ্ট
৭৩ . যে আল্লাহর উপর ভরসা করে , তার
জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট। [ ইবনে মাজাহ ]
জ্ঞানী
৭৪ . জ্ঞানীরা নবীদের উত্তরাধিকারী ।
[ তিরমিযী ] ৭৫. জ্ঞানবান আর দুনিয়াদার সমান নয়।
[ দারেমী ] ৭৬. সবচেয়ে মন্দ লোক
জ্ঞানীদের মধ্যে যারা মন্দ তারা, আর
সবচেয়ে ভালো লোক জ্ঞানীদের
মধ্যে যারা ভালো তারা। (দারমী)
৭৭. প্রতিটি জ্ঞান তার বাহকের জন্যে বিপদের
কারণ, তবে যে সে অনুযায়ী আমল (কাজ)
করে তার জন্যে নয়। (তাবরানী)
শিক্ষক
৭৮ . আমি প্রেরিত হয়েছি শিক্ষক হিসেবে।
[ মিশকাত ] ৭৯. শিক্ষাদান করো এবং সহজ করে
শিখাও । [ আদাবুল মুফরাদ ]
সুধারণা কুধারণা
৮০. সুধারণা করা একটি ইবাদত। [ আহমদ ] ৮১. অনুমান
ও কুধারণা করা থেকে বিরত থাকো , কেননা
অনুমান হলো বড় মিথ্যা কথা। [ সহীহ বুখারী ]
যুলম
৮২. যুলম করা থেকে বিরত থাকা । কেননা ,
কিয়ামতের দিন যুলম অন্ধকারের রূপ নেবে।
[ সহীহ মুসলিম ] ৮৩. মযলুমের ফরিয়াদ
থেকে আত্মরক্ষা করো। [ সহীহ
বুখারী ]
ভ্রাতৃত্ব
৮৪. মুমিন মুনিনের ভাই । [ মিশকাত ] ৮৫. মুসলমান
মুসলমানের ভাই । [ সহীহ বুখারী ] নোট : এ
দুটি হাদীসে ঈমান এবং ইসলামকে ভ্রাতৃত্বের
ভিত্তি বলা হয়েছে।
ভ্রাতৃত্বের দায়িত্ব
৮৬. মুমিন মুমিনের আয়না । [ মিশকাত ] শিক্ষা : আয়না
যেমন ময়লা দূর করতে এবং সাজ সৌন্দর্য গ্রহণ
করতে সাহায্য করে , তেমনি একজন মুমিনের
কর্তব্য তার মুমিন ভাইয়ের দোষ ত্রুটি দূর ও
সুন্দর গুণাবলী অর্জন করার কাজে সাহায্য করা।
৮৭. মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার ভাইয়ের
প্রতি যুলম করেনা এবং তাকে অপমানিতও
করেনা। [ সহীহ মুসলিম ] ৮৮. মুমিন মুমিনের
সাথে প্রাচীরের গাঁথুনির মতে মজবুত
সম্পর্ক রাখে। [ সহীহ বুখারী ] ৮৯ . মুমিন
ছাড়া অন্যকে সাথী বন্ধু বানাবেনা। [ মিশকাত ]
সুকৃতি দুস্কৃতি
৯০. যে ভালো কাজের আদেশ করেনা এবং
মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করেনা , সে আমার
লোক নয়। [ তিরমিযী ] বিনয়
৯১ . যে আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয়ী হয় ,
আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। [ মিশকাত ]
বিশ্বাস ভংগ করা
৯২.যে তোমার সাথে বিশ্বাস ভংগ করেছে ,
তুমি তার সাথে বিশ্বাস ভংগ করোনা । [তিরমিযী ]
আনুগত্য ও নেতৃত্ব
৯৩. যে নেতার আনুগত্য করলো, সে
আমারই আনুগত্য করলো। [ সহীহ বুখারী ]
৯৪. যে নেতার অবাধ্য হলো সে আমার
অবাধ্য হলো। [ সহীহ বুখারী ] ৯৫. যে
আল্লাহর অবাধ্য হয় , তার আনুগত্য করা যাবেনা।
[ কানযুল উম্মাল ] ৯৬. কারো এমন হুকুম মানা
যাবেনা , যাতে আল্লাহর হুকুম অমান্য করতে
হয়। [ সহীহ মুসলিম ] ৯৭. যে নেতা হয় ,
তাকে সবার চেয়ে দীর্ঘ হিসাব চেয়ে
দীর্ঘ হিসাব দিতে হবে। [ কানযুল উম্মাল ] দান
৯৮.দান হচ্ছে একটি প্রমাণ। [ সহীহ মুসলিম ]
৯৯. যে আল্লাহর পথে একটি দান করে ,
আল্লাহ তার জন্যে সাতশ ; গুণ লিখে দেন।
[ তিরমিযী ] ১০০. দান সম্পদ কমায়না।
[ তিবরানী ] ভালো ব্যবহার
১০১ . যে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান
রাখে , সে যেনো উত্তম কথা বলে।
[ সহীহ বুখারী ] ১০২ . তোমার ভাইয়ের
দিকে হাসি মুখে তাকানো একটি দান ।
[ তিরমিযী ] ১০৩. যে মানুষের কৃতজ্ঞতা
প্রকাশ করেনা , সে আল্লাহরও কৃতজ্ঞ হয়না।
[ আবু দাউদ ] অর্থ ও আল্লাহ ভীতি
১০৪. যে আল্লাহকে ভয় করে , তার ধনী
হওয়াতে দোষ নেই। [ মিশকাত ] ১০৫. যে
আল্লাহকে ভয় করে , তার জন্যে অর্থের
প্রাচুর্যের চেয়ে শারীরিক সুস্থতা উত্তম।
[ মিশকাত ] সত্য মিথ্যা
১০৬. সত্য দেয় মনের শান্তি আর মিথ্যা দেয়
সংশয়। [ তিরমিযী ] প্রফুল্লতা
১০৭. মনের প্রফুল্লতা আল্লাহর একটি অনুগ্রহ ।
[ মিশকাত ] ক্ষতিগ্রস্থ লোক
১০৮. যার দুটি দিন সমান গেলো , সে
ক্ষতিগ্রস্ত হলো। [ দায়লমী ] ব্যাখ্যাঃ
হাদীসটির মর্ম হলো , যে ব্যক্তি প্রতিদিন
নিজেকে আগের দিনের চেয়ে এক ধাপ
উন্নত কতে পারেনা , কিছুটা এগিয়ে নিতে
পারেনা , সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পিছিয়ে
পড়ে।
ভালো মানুষ
১০৯ তোমাদের মধ্যে ভালো মানুষ তারা ,
যাদের দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়।
[ ইবনে মাজাহ ] খাবার আদব
১১০. ডান হাতে খাও এবং যা নিকটে তা থেকে
খাও। [ সহীহ বুখারী ] মেহমানদারি
১১১. যে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান
রাখে , সে যেনো নিজের মেহমানকে
সম্মান -যত্ন করে । [ সহীহ বুখারী ] ভালো
কাজ
১১২. প্রতিটি ভালো কাজ একটি দান। [ সহীহ
বুখারী ] ১১৩. উত্তম লোক সে , যার বয়স
হয় দীর্ঘ আর কর্ম হয় সুন্দর । [ তিরমিযী ]
মুসলমানের অধিকার
১১৪. মুসলমান সে , যে নিজের অনিষ্টকর ভাষা
ও কর্ম থেকে মুসলমানদের নিরাপদ রাখে।
[ সহীহ বুখারী ] ১১৫. মুসলমানকে গালি দেয়া
ফাসেকী আর হত্য করা কুফরী। [ সহীহ
বুখারী ] ১১৬. প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে
অপর মুসলমানদের রক্ত , সম্পদ ও ইজ্জত
সম্মানযোগ্য। [ সহীহ মুসলিম ] ব্যাখ্যা :
হাদীসটির অর্থ এভাবেও বলা যায় :
মুসলমানের জন্যে মুসলমানের রক্তপাত করা
এবং সম্পদ ও ইজ্জত নষ্ট করা হারাম।
মুহাজির
১১৭. মুহাজির সে ,যে আল্লাহর নিষেধ করা কাজ
ত্যাগ করে। [ সহীহ বুখারী ] শোকর ও
সবর
যে খেয়ে শোক আদায় করে , সে
ধৈর্যশীল রোযাদারের সমতূল্য। [ তিরমিযী ]
১১৯. সবর হলো আলো। [ সহীহ মুসলিম ]
ধোকা হিংসা বিদ্বেষ
১২০. যে কাউকেও প্রতারণা করলো সে
আমার লোক নয়। [ সহীহ মুসলিম ] ১২১ .
সাবধান! তোমরা হিংসা করা থেকে আত্মরক্ষা
করো। [ আবু দাউদ ] ১২২. তোমরা একে
অপরের প্রতি হিংসা করোনা , ঘৃণা বিদ্বেষ
কারো না এবং পরস্পর থেকে মুখ ফিরিয়ে
নিয়োনা । [ সহীহ মুসলিম ] শিশু
১২৩. শিশুরা আল্লাহর ফুল।[ তিরমিযী ]
পরিজনের কাছে উত্তম
১২৪. তোমাদের মাঝে উত্তম লোক সে ,
যে তার পরিবার পরিজনের কাছে উত্তম।
[ ইবনে মাজাহ ] জনসেবা
১২৫. রোগীর সেবা করো এবং
ক্ষুধার্তকে খেতে দাও। [ সহীহ বুখারী ]
১২৬. আল্লাহ সকল কিছুর প্রতি দয়া ও সহানুভূতি
দেখাবার নির্দেশ দিয়েছেন। [ সহীহ
মুসলিম ] ১২৭. আল্লাহ ততোক্ষণ বান্দাহর সাহায্য
করেন , যতোক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য
করে। [ সহীহ মুসলিম ] ১২৮. যে তার
ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করে , আল্লাহ তার
প্রয়োজন পূরণ করেন। [ সহীহ বুখারী ]
১২৯. তোমার ভাইয়ের বিপদে আনন্দ প্রকাশ
করোনা। [ তিরমিযী ] ব্যক্তিত্ব গঠন
১৩০. মুসলমান ব্যক্তির ইসলামনের
সৌন্দর্যগুলোর একটি হলো , নিরর্থক কথা ও
কাজ ত্যাগ করা। [ তিরমিযী ] ১৩১ . লজ্জা
ঈমানের অংশ। [ মিশকাত ] ১৩২ . যখন সাহায্য
চাইবে , আল্লাহর কাছে চেয়ো। [ মিশকাত ]
আল্লাহকে স্মরণ করা
১৩৩. যে তার প্রভুকে স্মরণ করে , আর
যে করেনা , তাদের উদাহরণ হলো জীবিত
ও মৃতের মতো। [ সহীহ মুসলিম ] সত্য কথা
১৩৪. সত্য কথা বলো , যদিও তা তিক্ত । [ ইবনে
হিব্বান ] কর্মকৌশল
১৩৫. প্রচেষ্টার চেয়ে বড় কোনো যুক্তি
নাই। [ ইবনে হিব্বান ] নিন্দুক
১৩৬. কোনো নিন্দুক জান্নাতে প্রবেশ
করবেনা। [ বুখারী ] রাগ
১৩৭. রাগে উত্তেজিত হলে চুপ করে
থাকো। [ আদাবুল মুফরাদ ] ১৩৮.তোমাদের
কেউ যখন উত্তেজিত হবে , সে যেনো
অযু করে আসে। [ আবু দাউদ ] অহংকার
১৩৯. যার মনে বিন্দু পরিমাণ অহংকার আছে , সে
জান্নাতে প্রবেশ করবেনা। [ সহীহ মুসলিম ]
সালাম
১৪০. তোমাদের মাঝে সালাম আদান প্রদানের
ব্যাপক প্রচলন করো। [ সহীহ মুসলিম ] ১৪১.
সবচেয়ে কৃপণ লোক সে , যে সালাম আদান
প্রদানে কৃপণতা করে । [ তিবরানী ] দয়া ও
ভালোবাসা
১৪২. যারা পৃথিবীতে আছে তাদের দয়া
করো , তাহলে যিনি আকাশে আছেন তিনি
তোমাকে দয়া করবেন। [ মিশকাত ] ১৪৩. যে
মানুষের প্রতি দয়া করেনা , আল্লাহ তার প্রতি দয়া
করেননা। [ সহীহ বুখারী ] ১৪৪. তোমরা
মুমিন হবেনা যতোক্ষণ একে অপরকে
ভালোবাসবেনা ।
শরীরের অধিকার
১৪৫. তোমরা উপর তোমার শরীরের
অধিকার রয়েছে। [ সহীহ বুকারী ] ব্যাখ্যা :
শরীরের অধিকার হলো , শরীর সুস্থ রাখা ও
বিশ্রাম নেয়া।
প্রতিবেশীর অধিকার
১৪৬. প্রতিবেশীর প্রতি সুন্দর সহানুভূতির
আচরণ করো , তবেই মুমিন হবে। [ মিশকাত ]
১৪৭. সে মুমিন নয় , যে নিজে পেট পূরে
খায় আর পাশেই তার প্রতিবেশী না খেয়ে
থাকে। [ বায়হাকী ] প্রাচুর্য
১৪৮. মনের প্রাচুর্যই আসল প্রাচুর্য । [ সহীহ
বুখারী ] ১৪৯. আল্লাহ তোমার ভাগে যা
রেখেছেন , তাতে সন্তুষ্ট থাকো ,
তবেই হবে সবচেয়ে প্রাচুর্যশালী।
[ মিশকাত ] ১৫০. যার উদ্দেশ্য হয় পরকাল লাভ করা
, আল্লাহ তার অন্তরে প্রাচুর্য দান করেন।
[ তিরমিযী ] জান্নাত ও জাহান্নাম
১৫১. জান্নাত এতই আকর্ষণীয় যে, তার
আকাংখীর চোখে ঘুম আসেনা। [ তিবরানী ]
১৫২. দোযখ এতোই ভয়াবহ যে , তার থকে
পলায়নকারীর চেখে ঘুম আসেনা।
[ তিবরানী ] মনের মরিচিকা
১৫৩. মনের মধ্যে লোহার মতোই মরিচিকা
পড়ে।। আর তা দূর করার উপায় হলো ক্ষমা
প্রর্থনা করা । [ বায়হাকী ] অধীনস্থ
১৫৪. অধীনস্থদের সাথে নিকৃষ্ট
আচরণকরী জান্নাতে প্রবেশ করবেনা।
[ আহমদ] মৃতদের গালি না দেয়া
১৫৫. মৃতদের গালি দিয়োনা।
উড়ো কথা প্রচার না করা
১৫৬. প্রতিটি শোনা কথা বলে বেড়ানোটাই
মিথ্যাবাদী হবার জন্যে যথেষ্ট। [ সহীহ
মুসলিম ] মর্যাদা দান
১৫৭. মর্যাদা অনুযায়ী মানুষকে সমাদর করো।
[ আবু দাউদ ] সতর্কতা
১৫৮. মুমিন এক পাথরে দুইবার হোঁচট খায়না।
[ সহীহ বুখারী ] অট্টহাসি
১৫৯ অধিক হাসাহাসি অন্তরকে মেরে
ফেলে । [ তিবরানী ] সন্তান
১৬০. তোমাদের সন্তানদের মর্যাদা দান
করো এবং তাদের সুন্দর আচার ব্যবহার শিখাও।
[ ইবনে হিব্বান ] শক্তিমান কে ?
১৬১. শক্তিশালী সে , যে রাগের সময়
নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
[ সহীহ মুসলিম ] অধঃপতন
১৬২. যার কর্ম তাকে ডুবায় , তার বংশ তাকে
উঠাতে পারেনা। [ সহীহ মুসলিম ] শাসক হবে
তেমন
১৬৩. তোমরা হবে যেমন , তোমাদের
শাসকও হবে তেমন। [ মিশকাত ] অপরের
দোষ
১৬৪. যে ব্যক্তি একজন মুসলমানের দোষ
গোপন করবে , আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার
দোষ গোপন করবেন। [ সহীহ মুসলিম ]
আল্লাহর বিধান পালন
১৬৫. হারাম থেকে বেঁচে থাকো , আল্লাহ
তোমাকে হিফাযত করবেন। [ তিরমিযী ]
সৌভাগ্য
১৬৭. আল্লাহর সিদ্ধান্ত সন্তুষ্ট থাকতে পারা
আদম সন্তানের একটি সৌভাগ্য । [ তিরমিযী ] কি
নিয়ে উঠবে ?
১৬৮. প্রতিটি বান্দা কিয়ামতে তাই নিয়ে উঠবে ,
যা নিয়ে সে মরেছে । [ সহীহ মুসলিম ]
নেতা
১৬৯. নেতা হবে মানুষের সেবক।
[ দায়লমী ] ১৭০. তোমাদের প্রত্যেকেই
দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব
পালনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
১৭১. মানুষের অবস্থা উটের মতো , একশটি
উটের মধ্যে ও একটি ভালো সোয়ারী
পাওয়া যায়না। [ সহীহ মুসলিম ] জামাতবদ্ধতা
১৭২. জামাদের প্রতি আল্লাহর রহমত থাকে ।
যে জামাত ত্যাগ করে , সে জাহান্নামে
নিক্ষিপ্ত হয়। [ তিরমিযী ] মতভেদ
১৭৩. মতভেদ কারোনা। তোমাদের পূর্বে
যারা মতভেদ করেছিল , তারা ধ্বংস হয়েছে।
[ সহীহ বুখারী ] আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তি
১৭৪. গোটা সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার। যে ব্যক্তি
আল্লাহর পরিবারের জন্যে বেশী
উপকারী , সে তাঁর কাছে বেশী প্রিয়।
[ সহীহ মুসলিম ] রসূলুল্লাহ সাঃ
১৭৫. আমি রসূলুল্লাহ (সা) চাইতে অধিক সুন্দর
কোনো কিছু দেখিনি। [ আবু হুরাইরা রা.
তিরমিযী ] ১৭৬. আমি কাউকেও রসূলুল্লাহর (সা)
চাইতে দ্রুত চলতে দেখিনি। [ আবু হুরাইরা রাঃ
তিরমিযী ] ১৭৭. রসূলুল্লাহ (সাঃ) কাছে কিছু চাওয়া
হয়েছে আর তিনি ‘ না’ বলেছেন , এমন
কখনো হয়নি। [ জাবির : সহীহ বুখারী ] ১৭৮.
রসূলুল্লাহ (সাঃ) রোগীর সেবা করতেন এবং
কফিনের সাথে যেতেন। [ আনাস রাঃ ইবনে
মাজাহ ] ১৭৯. রসূলুল্লাহ (সা) দীর্ঘ সময় চুপ
থাকতেন । [ জাবির বিন সামু রাঃ শরহে সুন্নাহ ]
১৮০. রসূলুল্লাহ (সা) যখন কথা বলতেন , তখন
কেউ ইচ্ছে করলে তাঁর বক্তব্যের শব্দ
সংখ্যা গুণে নিতে পারতো । [ আয়েশা রাঃ
সহীহ বুখারী ] ১৮১. রসূলুল্লাহ (সা) কথা
বলতেন থেমে থেমে স্পষ্ট করে ।
[ জাবির রাঃ আবু দাউদ ] ১৮২. রসূলুল্লাহ (সা) সাথে
কেউ খারাপ ব্যবহার করলে বিনিময়ে তিনি খারাপ
ব্যবহার করতেন না , বরং ক্ষমা করে দিতেন এবং
উপেক্ষা করতেন। [ আয়েশা রাঃ তিরমিযী ]
১৮৩. আমি প্রেরিত হয়েছি রহমত হিসেবে।
[ সহীহ মুসলিম ] ১৮৪. সুখবর তার জন্যে , যে
আমাকে দেখেছে। সাতবার সুখবর ঐ ব্যক্তির
জন্যে যে আমাকে দেখেনি , অথচ আমার
প্রতি ঈমান এনেছে। [ আহমদ ] সাহাবায়ে কিরাম
১৮৫ . আমার উম্মতের উত্তম লোক হলো
আমার সময়ের লোকেরা । [ সহীহ
বুখারী ] ১৮৬. আমার সাহাবীদের সম্মান দান
করো , কারণ তারা তোমাদের মধ্যে
সর্বোত্তম। [ মিশকাত ] ১৮৭. আমার
সাহাবীদের গালি দিওনা। [ সহীহ বুখারী ] আবু
বকর রাঃ
১৮৮. আমি যদি আমার প্রভুকে ছাড়া আর কাউকেও
বন্ধু বানাতাম , তবে অবশ্যি আবু বকরকে বন্ধু
বানাতাম । [ সহীহ বুখারী ] ১৮৯. হে আবু
বকর! (পর্বত) গুহায় তুমি আমার সাথী ছিলে ,
হাউজে কাউসারেও তুমি আমার সাথী থাকবে।
[ তিরমিযী ] ১৯০ . নিজের সাথীত্ব ও অর্থ
দিয়ে আমাকে সকলের চেয়ে অধিক
সহযোগিতা করেছে আবু বকর। [ সহীহ
বুখারী ] ১৯১. হে আবু বকর ! আমার
উম্মতের মধ্যে তুমিই সর্বপ্রথম জান্নাতে
প্রবেশ করবে। [ আবু দাউদ ] উমর রাঃ
১৯২. আল্লাহ উমরের যবান ও অন্তরে সত্য
সন্নিবেশ করে দিয়েছেন ।[ তিরমিযী ]
১৯৩. আমার পরে যদি কেউ নবী হতো ,
তবে অবশ্যি উপর বিন খাত্তাব হতো।
[ তিরমিযী ] শ্রেষ্ঠ নারী
১৯৪.পৃথিবীর সর্বোত্তম নারী ইমরানের
কন্যা মরিয়ম আর খুয়াইলিদের কন্যা খাদীজা।
[ সহীহ বুখারী ] নোট : মরিয়ম ছিলেন
হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের মা , আর খাদীজা
ছিলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের স্ত্রী ।
দু’ আর নিয়ম ও গুরুত্ব
১৯৫.যখন কিছু প্রার্থনা করবে , আল্লাহর কাছে
করবে । [ মিশকাত ] ১০৬.দু’আ ইবাদত ।
[ তিরমিযী ] ১৯৭. দু’আ ইবাদতের মস্তিস্ক।
[ তিরমিযী ] ১৯৮. আল্লাহর কাছে তাঁর অনগ্রহ
চাও। তাঁর কাছে প্রার্থনা করাকে আল্লাহ খুবই
পছন্দ করেন। [তিরমিযী ] ১৯৯. যে আল্লাহর
কাছে চায়না , আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত হন।
[ তিরমিযী ] ২০০. আমি আল্লাহর কাছে দিন একশ
’ বার ক্ষমা প্রার্থনা করি। [ সহীহ মুসলিম ] তাওবা
২০১. বান্দাহ যখন অপরাধ স্বীকার করে এবং
তাওবা করে , তখন আল্লাহ তার তাওবা কবুল
করেন। [ সহীহ বুখারী ] ব্যাখ্যা : তাওবা
মানে ফিরে আসা। তাওবা করার অর্থ – অন্যায় ,
অপরাধ ও ভুল হয়ে গেলে তা স্বীকার
করে সে জন্যে অনুশোচনা করা ও তা
থেকে, ফিরে আসা এবং এমন কাজ আর
কখনো না করার সিদ্ধান্ত নেয়া।
২০২. সব আদম সন্তানই ভুল করে । তবে
এদের মধ্যে উত্তম হলো তারা যারা ভুলের
জন্যে তাওবা করে। [ তিরমিযী ] রসূলুল্লাহর
কতিপয় দু’আ
২০৩. হে আল্লাহ ! আমি তোমার কাছে পানাহ
চাই দুশ্চিন্তা থেকে , মনোকষ্ট থেকে ,
বার্ধক্য থেকে , আলস্য ও কাপুরুষতা থেকে
এবং কৃপণতা ও ঋণের বোঝা থেকে ।
[ সহীহ বুখারী ] ২০৪.হে আল্লাহ ! আমার
অন্তরে আল্লাহভীতি দাও এবং তাকে পরিশুদ্ধ
করো। তুমিই তো তার উত্তম পরিশুদ্ধকারী ।
[ সহীহ মুসলিম ] ২০৫. ওগো আল্লাহ ! আমি
তোমার কাছে এমন জ্ঞান থেকে পানাহ চাই
যাতে কোনো কল্যাণ নেই । আর এমন হৃদয়
থেকেও আশ্রয় চাই যাতে তোমার ভয়
নেই। [ আহমদ ] ২০৬. আয় আল্লাহ ! আমি
তোমার কাছে পানাহ চাই সংশয় থেকে , কপটতা
থেকে আর অসৎ চরিত্র থেকে। [ নাসায়ী ]
২০৭. হে আল্লাহ ! আমি তোমার কাছে চাই
হিদায়াত , আল্লাহভীতি , পবিত্র জীবন এবং
প্রাচুর্য । [ সহীহ মুসলিম ] ২০৮. ওগো
আল্লাহ ! আমাকে ক্ষমা করে দাও , আমার প্রতি
দয়া করো , আমাকে সঠিক পথ দেখাও ,
আমাকে স্বস্তি দান করো এবং আমাকে
জীবিকা দাও। [ সহীহ মুসলিম ] ২০৯. আমার
আল্লাহ ! আমি তোমার কাছে কল্যাণময় জ্ঞান ,
গ্রহণযোগ্য আমল আর পবিত্র জীবিকা ।
[ আহমদ] ২১০. ওগো আল্লাহ ! আমি তোমার
কাছে প্রার্থনা করছি সুস্থতা , স্বস্তি , বিশ্বস্ততা ,
উত্তম চরিত্র আর তাকদীরের প্রতি সন্তুষ্টি।
[ বায়হাকী ] ২১১. আমার আল্লাহ ! আমি তোমার
ভালোবাসা চাই , আর যে তোমাকে
ভালোবাসে তার ভালোবাসা চাই। [ তিরমিযী ]
জীবন পথের আলো
২১২. আবু যর (রা) বলেন : আমি নিবেদন
করলাম,ওগো আল্লাহ রসূল আমাকে উপদেশ
দিন। তিনি বললেনঃ আমি তোমাকে উপদেশ
দিচ্ছি আল্লাহকে ভয় করবার। কারণ এটাই তোমার
সমস্ত কাজকে সৌন্দর্য দান করবে।
আমি বললাম , আমাকে আরো উপদেশ দিন।
তিনি বললেন : কুরআন পাঠ এবং আল্লাহর স্মরণ ও
তাঁর বিষয়ে আলোচনাকে নিজের কর্তব্য
কাজ বানিয়ে নাও। এতে আকাশে তোমায়
নিয়ে আলোচনা হবে আর এটা পৃথিবীতে
তোমার পথের আলো হবে।
আমি বললাম , আমাকে আরো উপদেশ দিন।
তিনি বললেন : বেশী সময় নীরব থাকবে ,
কম কথা বলবে। এটা শয়তানকে তাড়াবার হাতিয়ার
হবে এবং তোমার দীনের কাজের সহায়ক
হবে।
আমি আরয করলাম , আমাকে আরো আদেশ
দিন।
তিনি বললেন তিক্ত হলেও সত্য কথা বলবে।
আমি নিবেদন করলাম , আমাকে আরো
উপদেশ দিন।
তিনি বললেন : ইসলামী আন্দোলন ( জিহাদ )
করাকে নিজের কর্তব্য বানিয়ে নাও। কারণ এটাই
মুসলমানদের বৈরাগ্য।
আমি বললাম , আমাকে আরো কিছু বলুন ।
তিনি বললেন : দরিদ্র লোকদের
ভালোবাসবে এবং তাদের সাথে উঠাবসা
করবে।
আমি বললাম , আমাকে আরো উপদেশ দিন।
তিনি বললেন : তোমার নিজের মধ্যে যেসব
দোষ ত্রুটি আছে , সেগুলোর দিকে তাকাও
। অন্যের মধ্যে যে দোষ ত্রুটি আছে তা
খুজে বেড়ানো এবং বলে বেড়ানো
থেকে বিরত থাকো।
অতপর তিনি আমার বুকে হাত মেরে বললেন ,
আবু যর ! কর্মকৌশল ও কর্মপ্রচেষ্টার চাইতে
বড় বুদ্ধিমত্তা আর নেই। হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ
থেকে বিরত থাকার চেয়ে বড় বীরত্ব কিছু
নেই। আর সুন্দর ব্যবহারের চাইতে বড়
কোনো ভদ্রতা নেই। [ ইবনে হিব্বান ] সঠিক
পথে চলো
২১৩. আমার প্রভু আমাকে নয়টি নির্দেশ
দিয়েছেন। সেগুলো হলো :
১. গোপনে ও প্রকাশ্যে আল্লাহকে ভয়
করতে ,
২. সন্তুষ্টি এবং অসন্তুষ্টি উভয় অবস্থাতে ন্যায়
কথা বলতে ,
৩. দারিদ্র ও প্রাচুর্য উভয় অবস্থাতে মধ্যপন্থা
অবলম্বন করতে ,
৪. যে আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে , তার
সাথে সম্পর্ক জুড়তে,
৫. যে আমাকে বঞ্চিত করে , তাকে দান
করতে ,
৬. যে আমার প্রতি অবিচার করে , তাকে ক্ষমা
করে দিতে ,
৭. আমার নীরবতা যেনো চিন্তা গবেষণায়
কাটে ,
৮. আমার কথাবার্তা যেনো হয় উপদেশমূলক ,
৯. আমার প্রতিটি দৃষ্টি যেনো হয় শিক্ষা
গ্রহণকারী ।
এ ছাড়া ও আমার প্রভু আমাকে আরো দুটি
গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছেন, সেগুলো
হলো :
১. আমি যেনো ভালো কাজের আদেশ করি
এবং
২. মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করি।
(সহীহ বুখারী)
জেনে নিন মহানবী (সাঃ) এর ২১৩টি বাণী:-
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন